সেঞ্চুরি করা অবশ্যই সৌভাগ্যের। সেই সেঞ্চুরিই অনেক সময় হয়ে ওঠে নিদারুণ এক হতাশার। সেঞ্চুরি করার পর, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যান চেষ্টা করেন- সেই সেঞ্চুরিকে আরও অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যেতে। কেউ পারেন, কেউ পারেন না। এ নিয়ে হতাশারও কিছু নেই। কিন্তু কোনো ব্যাটসম্যান যদি ১৯৯ রানে এসে আউট হয়ে যান, তাহলে কেমন লাগবে বলুন তো!
আজ দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রমে তেমনই দুর্ভাগ্যের স্বীকার হলেন ডিন এলগার। হয়তো বা নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হয়ে মোস্তাফিজের বলে ওইভাবে ক্যাচটা তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৯ রানে এভাবে কোনো ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাক, এ বিষয়টা চায় না কেউই। কখনও কখনও এই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে যায় কেউ কেউ।
এমন দুর্ভাগা ব্যাটসম্যান ইতিহাসে ডিন এলগার একা নন। আরও রয়েছেন ১১জন।
তাকে নিয়ে এক ডজন পূর্ণ হলো। তবে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসেবে এমন
১৯৯ রানের হতাশায় পুড়তে হলো এলগারকে। বাকি ১১ জনের মধ্যে ৩জন রয়েছেন
অস্ট্রেলিয়ার। ২জন করে শ্রীলঙ্কার ও ভারতের। ১জন করে রয়েছেন জিম্বাবুয়ে,
পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের।
মুদাস্সার নাজর (পাকিস্তান): এই তালিকায় সবার ওপরে রয়েছেন পাকিস্তানের
মোদাস্সার নাজর। ১৯৮৪ সালে ১৯৯ রানে আউট হয়ে যান তিনি। তবে মুদাস্সারের
সতীর্থ কাশিম উমর করেন ২১০ রান। ওই টেস্টে সেলিম মালিকও সেঞ্চুরি করেন।
অপরাজিত থাকেন ১০২ রানে। ভারতের বিপক্ষে টেস্টটি তো শেষই হয়নি। বরং,
পাকিস্তান প্রথম ইনিংসই শেষ করতে পারেনি।মোহাম্মদ আজহারুদ্দিন (ভারত) : আরও একটি ড্র টেস্টে দুর্ভাগ্যের ১৯৯ রানে আউট হন মুহাম্মদ আজহারুদ্দিন। ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৬৭৬ রান করে ভারত। সেই ম্যাচে সুনীল গাভাস্কার করেন ১৭৬ রান। আজহারুদ্দিন আউট হন ১৯৯ রানে। কপিল দেব আউট হন ১৬৩ রান করে।
ম্যাথ্যু ইলিয়ট (অস্ট্রেলিয়া) : অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ১৯৯৭ সালে অ্যাসেজে ম্যাথ্যু ইলিয়ট ১৯৯ রানে আউট হন। যদিও ওই ম্যাচে ইনিংস ব্যাবধানে জয় লাভ করে অস্ট্রেলিয়া। ইলিয়টের ক্যারিয়ারে এই ১৯৯ রানই সর্বোচ্চ। অ্যাসেজেও এটাই একমাত্র ১৯৯।
সনাৎ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা) : আগের টেস্টেই খেলেছিলেন অনবদ্য ৩৪০ রানের ইনিংস। পরের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও জ্বলে উঠলেন তিনি। করে ফেললেন ১৯৯ রান। যদিও ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। কিন্তু জয়সুরিয়া নিজেকেই যেন হতাশ করলেন ১৯৯ রানে আউট হয়ে।
স্টিভ ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া) : ম্যাচটি ছিল ব্রায়ান লারার। ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটিতে লারার ব্যাটে ১ উইকেটে জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ওই টেস্টেরই প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন স্টিভ ওয়াহর মত ব্যাটসম্যান।
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (জিম্বাবুয়ে) : ১৯৯ রান করেছিলেন জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। এবং তিনি ছিলেন অপরাজিত। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছিল ৩৯১ রানে। ফ্লাওয়ার একা ১৯৯ রানে অপরাজিত থেকে যান। একজন সতীর্থের অভাবে ডাবল সেঞ্চুরিটি পাননি তিনি।
ইউনিস খান (পাকিস্তান) : ভারতের বিপক্ষে আগের টেস্টেই নিজের ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান ইউনিস খান। ২০০৬ সালে পরের টেস্টে লাহোরে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬৭৯ রান তোলে পাকিস্তান। দুর্ভাগ্য ইউনিস খানের। ১৯৯ রানে থাকতে তিনি হলেন রানআউট।
ইয়ান বেল (ইংল্যান্ড) : ১৯৯ রানে থেকে কেউ বোলারকে রিটার্ন ক্যাচ দেবে এটা যেন একেবারেই অকল্পনীয়। ইয়ান বেল সে কাজটিই করলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বাম হাতি অর্থোডক্স পল হ্যারিসের হাতে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ১৯৯ রানে। যদিও ইংল্যান্ড ৫৯৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। ম্যাচ হয়েছিল ড্র।
কুমার সাঙ্গাকারা (শ্রীলঙ্কা) : অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের মত ভাগ্য বরণ করতে হলো কুমার সাঙ্গাকারাকেও। ১৯৯ রানে থেকে গেলেন অপরাজিত। সতীর্থের অভাবে নিজের ডাবল সেঞ্চুরিটা পূর্ণ করতে পারলেন না তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচটিতে অবশ্য ২০৯ রানে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা।
স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া) : অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও একবার ১৯৯ রানে আটকে গেলেন। নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা ১ রানের জন্য মিস করেন তিনি। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আউট হয়ে গেলেন জেরোম টেলরের বলে। যদিও এরপর ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন। তবে ওটা তো একটা হতাশার ইনিংস তার জন্য।
লোকেশ রাহুল (ভারত) : ভারতের লোকেশ রাহুলও আটকে গিয়েছিলেন ১৯৯ রানে। গত বছর চেন্নাইতে করুন নায়ার যে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ফেলেছিল, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই টেস্টে ১৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন লোকেশ রাহুল। ওটাই লোকেশ রাহুলের এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
ডিন এলগার (দ. আফ্রিকা) : ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে সর্বশেষ আউট হলেন ডিন এলগার। মনেই হচ্ছিল না তিনি আউট হবে। কিন্তু নার্ভাস নাইটিজ হয়তো ভর করেছিল তার ওপর। তিনি আউট হলেন ১৯৯ রানে। মোস্তাফিজের বলে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
0 comments:
Post a Comment